গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে গড়ে উঠা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায়ও পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে প্রভাবশালী উন্নয়ন সহযোগী দেশটি।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে যৌথ ব্রিফিংয়ে এমন বার্তাই দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ উপদেষ্টা (আন্ডার সেক্রেটারি পদমর্যাদার) ডেরেক শোলে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলের সৌজন্য সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার আগ্রহের পাশাপাশি আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু আয়োজনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন এ কথা জানান।
তিনি আরও জানান, তার সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে আলোচনার পাশাপাশি র্যাব এবং সংস্থার সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়।
ইউএসএআইডির কাউন্সেলর ক্লিনটন হোয়াইটসহ ৭ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধি দল নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ব্লিঙ্কেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে দুদিনের সফরে ঢাকায় আসেন। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে প্রাতঃরাশ বৈঠকের মধ্য দিয়ে সফরের কর্মসূচি শুরু করেন। সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে ও দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি।
এ ছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকগুলোতে কাউন্সেলর শোলে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকারের সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে সহযোগিতা এবং একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।
ব্লিঙ্কেনের বিশেষ অ্যাসাইনমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত ডেরেক শোলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘খুব ভালো’ বৈঠক হয়েছে জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র কতটা গুরুত্ব দেয়, এরই প্রতিফলন তার ঢাকা সফর। সফরকালে তিনি দুই দেশের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিকভাবে দুদেশের অংশীদারত্ব বাড়ছে। গত ৫১ বছরে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বে গড়ে উঠা বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের বিষয়েও ‘আশাবাদী’ তারা।’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টিতে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে শোলে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার মূল উৎস মিয়ানমারে। আমরা এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাব। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নিজেরাও সংকটে পড়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চেষ্টার পাশাপাশি তাদের এ দেশে আশ্রয়ের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার মার্কিন প্রশাসনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, তারা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন এবং শরণার্থী সংকট থেকে দেশটির মানবিক প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে চাপ কমানোর চেষ্টা করছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ডেরেক শোলে এসেছেন আমাদের দু’দেশের সম্পর্ককে আরও ভালো করার জন্য, শক্তিশালী করার জন্য। আমরাও এ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাই। আমেরিকা আমাদের সবচেয়ে বড় ইনভেস্টর।’ বাংলাদেশে নতুন গড়ে তোলা একশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই তারা রোহিঙ্গা বিষয়ে আমাদের সাহায্য করছে এবং করে যাচ্ছে। এ সংকটে তারা সবচেয়ে বড় দাতা দেশ। তারা বাংলাদেশের পাশে আছে।
পাঠকের মতামত